জাফর ইকবাল স্যার, নিজের পূত্র কণ্যাদের আগে মানুষ করেন, তারপর আমাদেরকে নীতির কথা শোনান। আমাদের মা-বোনদের হিজাব বোরকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে নিজের মেয়েকে অন্তত বাঙালী হবার শিক্ষা দিন। আপনার মেয়ের কান্ডকীর্তী দেখে বাঙালী হিসেবে লজ্জিত হচ্ছি । দেখেন কান্ড :
জাফর ইকবালের কণ্যা ইয়েশিমের ফেসবুক এলবাম থেকে যে কেউ দেখতে পারেন ছবিগুলো । লিংক : Click This Link (আপডেট)
জাফর কন্যার বাঙালীয়ানা পোশাক ও আচরনে ফুটে উঠেছে। এই জাফর ইকবালেরাই বাঙালীত্ব কপচিয়ে হাজারো তরুনের ব্রেন ওয়াশ করে।
প্রগতিশীল নাস্তিক হতে হলে ছেলেবন্ধুর সংখ্যার কোন লিমিট রাখা যাবেনা। ...। মদ খাওয়া ধরতেই হবে । বাবা জাফর ইকবাল কি এই শিক্ষাই দিয়েছেন কণ্যাকে ?
নাস্তিকতা আর প্রগতিশীলতা বটে। হলী খেলার বেলেল্লাপনা ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক আচরণ বটে। নাস্তিক বাবার শিক্সায় শিক্ষিত কণ্য! (জাফর ইকবাল এই মেয়েকেই বলেছিলেন, শুধু মুসলমান বেহেশতে যাবে, এইটা বাজে কথা, আর তার বইয়ের পাতায় পাতায় পাবেন ইসলামী পোশাকের কুৎসা, দাড়ি টুপি নিয়ে অভদ্র মন্তব্য, ওজুর পদ্ধতি নিয়ে কৌতুক আর ইসলাম বিরোধী যেকোন কিছুর প্রশংসা)
প্রগতিশীলতা আর বাঙালীয়ানার জ্বলজ্যান্ত উদাহরন। এই জাফর ইকবাল ই বলে রবীন্দ্রনাথকে পূজা করতে হবে
প্রগতিশীল ফ্যামিলি অর্থাৎ নাসতিক ফ্যামিলি..(এটা তারই মেয়ে..)
ভিডিও (১, ২, ৩) সহ নাইটক্লাব বা ছাত্রীহোষ্টেলের এই ছবি যখন অনলাইনে এসেছিলো, ইকবালের পূজারীরা প্রপাগান্ডা চালিয়েছিলো তার মেয়ৈ বলে । এখন প্রশ্ন হলো কোনটা তার মেয়ে ? আর মেয়েদেরকে কোন বাবা কি করে এমন নষ্ট হবার ট্রেনিং দিতে পারে ? মুখে বাঙালীয়ানা আর লাইফস্টাইলে পশ্চিমা নগ্নতা!
একজন ব্লগারের ব্লগ থেকে , "উনি হলেন আমাদের দেশের বিশিষ্ট পরিমল জাফরের একমাত্র মেয়ে ইয়েছিম ইকবাল। উনার বাবা দেশের তরুণীদের বোরকা, হিজাব নিয়ে ব্যাপক চিন্তিত শুনলাম , আর আমরা আমেরিকা প্রবাসিরা মাঝে মাঝে এমন কু-সন্তানের জন্য বিব্রতকর অবস্থায় পড়ি যারা কিনা এদেশে এসে বাংলাদেশের কালচারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়। যার মেয়ে এখানে একাদিক ছেলের সাথে লিভ টুগেদার আর মদ পান করে তার বাবাতো চাইবে বাংলাদেশেও এমন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ুক। থু তোর প্রগতিশীলতার মুখে ভন্ড জাফর!! থু তোর এমন মেয়ের মুখে। শুধু শিক্ষিত আর জ্ঞানী হলে মানুষ হওয়া যায়না।"
৪ নভেম্বর ২০১১ তারিখে প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী সংখ্যায় জাফর ইকবালে যে লেখাটি ছাপা হয়েছে তাতে তিনি মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাস তথা ইসলামের পর্দা প্রথা নিয়ে মারাত্নক সমালোচনা করেছেন। উনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, ইসলামের পর্দা প্রথা নারী উন্নয়নের প্রতিবন্ধক। বলেছেন, পর্দা মৌলবাদীদের চাপিয়ে দেওয়া একটা ব্যবস্থা। যারা নারীদের উন্নয়ন চায় না তারা নারীদেরকে ঘরের মধ্যে বন্দী করে রাখতে চায়। ঘরে বন্দী করতে না পারলে বোরকার মধ্যে বন্দী করে রাখতে চায়।
এখানে জাফর ইকবাল যে ভুল তথ্যটি দিয়েছেন, তাহলো পর্দা বা বোরকা কোনভাবেই মৌলবাদীদের চাপিয়ে দেওয়া কোন ব্যবস্থা নয়, বরং এটি ইসলামের অন্যতম একটি বিধান (অবশ্য 'মৌলবাদী' শব্দটি বলতে তিনি কাদেরকে বুঝিয়েছেন তা আমি নিশ্চিত নই। জাফর ইকবাল যদি মৌলবাদী শব্দটিকে অল্প বুদ্ধির বেকুব লোকজনদের মত করে ব্যবহার করেন, তখন ওনার বুদ্ধি জ্ঞানের মাত্রা নিয়ে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক)। নারী এবং পুরুষের জন্য পর্দা করা ইসলাম ধর্মমতে ফরজ বা অবশ্য কর্তব্য। ইসলামে অশ্লীলতা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এর জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। পর্দা করা অশ্লীলতা থেকে বাঁচার অন্যতম উপায়। এ কারণে মুসলমানেরা তা বিশ্বাস করেন এবং তা পালন করেন।
কিন্তু বাংলাদেশে ইসলামী আইন প্রচলিত নেই এবং পর্দা করা বাধ্যতামূলকও নয়। বরং বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকাররের আমলে হাইকোর্ট রায় দিয়েছে কাউকে জোর করে পর্দা করতে বাধ্য করা যাবে না। এই ঘোষণার পরও যদি কেউ পর্দা করে তবে ধরে নিতে হবে যে, সে ইচ্ছে করেই পর্দা করছে; এটা তার পছন্দ। জাফর ইকবাল এই পর্দার বিরুদ্ধে লিখেছেন এবং অনেকে তাকে বাহবা দিচ্ছেন। কিন্তু ভেবে দেখা দরকার যে, জাফর ইকবাল ভুল ব্যাখ্যা করে ইসলামকে উন্নয়নের প্রতিবন্ধক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, তিনি মানুষের স্বাধীনতা, পছন্দ, ধর্ম বিশ্বাস ইত্যাদিকে অপমান করেছেন। না কি জাফর ইকবালের মতের বাইরে গেলে তিনি তাকে মানুষের মর্যাদা দিতে ইচ্ছুক নন? প্রশ্ন জাগে, সবাইকে কি জাফর ইকবালের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী জীবন-যাপন করতে হবে? আমি ভেবে পাই না, জাফর ইকবাল কেন পর্দার উপর এত খেপে গেলেন? পর্দা কি সত্যিই মুসলমানদেরকে অনগ্রসর করে রেখেছে? এ রকম কোন গবেষণা কি উনি করেছেন যাতে দেখানো হয়েছে যে, পর্দা করা ছেলেমেয়েদের চেয়ে পর্দা না করা ছেলেমেয়েরা বেশি অগ্রসর? যদি কোন গবেষণা বা অন্য কোন প্রমাণ ওনার কাছে না থাকে তাহলে উনি কোন ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে এমন কথা বললেন? নাকি উনি ভেবেছেন যে, ওনার কথা বা মতামতকে কেউ চ্যালেঞ্জ করার সাহস পাবে না।
দু:খজনকভাবে জাফর ইকবাল যে সংষ্কৃতিকে প্রেসক্রাইব করেছেন, সে পাশ্চাত্য সংষ্কৃতির দেশ আমেরিকার স্কুলে মেয়েদের যৌন নির্যাতনের একটি গবেষণার ফলাফল ৬ নিউইয়র্ক টাইমস-এর ৬ নভেম্বর ২০১১ তারিখ সংখ্যায় ছাপা হয়েছে। সে গবেষণায় দেখানো হয়েছে ৭ম থেকে ১২শ গ্রেডে পড়ুয়া মেয়েদের ৫৬% এবং ছেলেদের ৪০% যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এই যৌন নির্যাতন ছেলে মেয়েদের উপর কী রকম নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে তাও রিপোর্টে প্রকাশ করা হয়েছে। ইসলামে এই যৌনতা নিষিদ্ধ বলেই পর্দার বিধান এসেছে। এখন জাফর ইকবালরা যদি যৌন নির্যাতনকে উন্নয়নের অন্তরায় হিসেবে বিবেচনা না করে যৌন নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য ব্যবহার করা পর্দাকে উন্নয়নের প্রতিবন্ধক হিসেবে বিবেচনা করেন তাহলে তো আর আলোচনার কিছু থাকতে পারে না। নিউইয়র্ক টাইমস এর খবরের লিংক: Click This Link
এটা ভাবার কোন কারণ নেই যে জাফর ইকবালের এই মানসিকতা নিয়ে মুসলমানেরা চিন্তিত। ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, যখন তীব্রভাবে ইসলামের বিরোধীতা করা হয়, তখনই ইসলামের প্রসার বাড়তে থাকে। মহান আল্লাহতায়ালা মুসলমানদেরকে ইসলামের মত মহামূল্যবান দৌলত দিয়ে ভাগ্যবান করেছেন। যিনি ইসলামের আলোকে আলোকিত হতে পেরেছেন তিনি অন্ধকার দেখে ভয় পাবেন না, এটাই স্বাভাবিক। একজন জাফর ইকবালের কী ক্ষমতা আছে যে তিনি মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাসকে নষ্ট করতে পারেন? উনি যা করেছেন তাহলো জেনে বুঝে মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাসকে অপমান করেছেন, ইসলামের নিয়মকে উন্নয়নের সাথে সাংঘর্ষিক করে উপস্থাপন করেছেন, ইসলামের বিধানকে মৌলবাদীদের চাপিয়ে দেওয়া বলার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন, ইসলামের নিয়মকে ত্যাগ করতে বলেছেন এবং অন্য বিশ্বাসকে প্রেসক্রাইব করেছেন। একজন মানুষ কোন একটি বিশ্বাসে বিশ্বাসী নাও হতে পারেন, বা নাও মানতে পারেন, তাই বলে তিনি সেই বিশ্বাসে বিশ্বাসীদেরকে কোনভাবেই অপমান করতে পারেন না। আমি স্পষ্টভাবে জাফর ইকবালকে এবং যারা ওনার মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাস অপমান করাকে সমর্থন করছেন, তাদেরকে জানিয়ে দিতে চাই, আপনারা এখনও মানুষ হয়ে উঠতে পারেননি। আপনাদের কাছে ভিন্নমত নিরাপদ নয়। আপনাদের হাতে কলম আছে, তাই কলম নিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। যদি আপনাদের হাতে অস্ত্র দেওয়া হয়, আপনারা অস্ত্র নিয়েও মুসলমানদের বিরু্দ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন। এই যখন আপনাদের অবস্থান তখন সঙ্গত কারণেই মুসলমানদের উচিত নিজেদের বিশ্বাসকে আপনাদের হাত থেকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করা।
জাফর ইকবালের ইসলাম বিরোধী অবস্থান এবং লেখালেখির কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তারা সঙ্গত কারণেই জাফর ইকবালের লেখার প্রতিবাদ করেছেন, ভিন্নমত পোষণ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় জাফর ইকাবলের অবস্থান বোঝার প্রয়াস নিয়েছেন অনেকেই। এই প্রয়াসেই মেয়েদের হলে মেয়েদের সাথে হিন্দী গানের সাথে জাফর ইকবালের নাচানাচি; ওনার মেয়ে ইয়েসিমের পোষাক, সংষ্কৃতি, যাপিত জীবন ইত্যাদি আলোচনায় এসেছে। জাফর ইকবাল ভক্ত বা কিছু মানবতাবাদী বা সুশীল নামধারী লোকজন সমস্বরে বলে যাচ্ছেন যে জাফর ইকবালের মেয়ের (ইয়েসিম ইকবাল) প্রাইভেসি নষ্ট করে তার মহা ক্ষতি করে ফেলা হয়েছে। কিন্তু তারা নিজেরাও ভাল করেই জানেন যে, সবগুলো ছবিই ইয়েসিম নিজে ফেসবুকে পোস্ট করেছে, যে পোস্ট সবার জন্য এখনও উন্মুক্ত। এখন ফেসবুকের ছবি সামহোয়্যারইন ব্লগে প্রকাশ করাটা যদি এত বড় অন্যায় হয়, তাহলে ওয়েব দুনিয়াকে মুক্ত বলা হচ্ছে কেন?
আপনি যা কিছু মুক্তভাবে ইন্টারনেটে দিচ্ছেন, আপনি চান বা না চান, প্রতিদিন সেগুলো বিভিন্নভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ব্যবহার করবে এটাই বাস্তবতা। ইয়েসিম ইকবাল যদি ঐ ছবিগুলো গোপন রাখতে চাইতো বা ছবিগুলো শুধুমাত্র তার বন্ধুদেরকে দেখাতে চাইতো তাহলে সে সুযোগও তার ছিল। কিন্তু সে তা করেনি অর্থাৎ ছবিগুলো মোটেই তার একান্ত ব্যক্তিগত নয়; বরং তার নিজের দিক থেকেই তা সবার জন্য উন্মুক্ত। এমতাবস্থায়, ইয়েসিম ইকবালের ব্যক্তিগত ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে, তার পার্সোনাল ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে বলে যে রব উঠেছে তা যুক্তিতে টেকে না। ছবিগুলোর মাধ্যমে জাফর ইকবালের নিজস্ব অবস্থান বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে। যেহেতু ছবিগুলো জাফর ইকবালের মেয়ের, সেহেতু ধরে নেওয়া যায় যে, জাফর ইকবাল সে সংষ্কৃতি সমর্থন করেন। মেয়েদের হলে জাফর ইকবাল মেয়েদের সাথে অশ্লীল হিন্দী গানের সাথে নাচছেন - এমন ভিডিও ইন্টারনেটে আছে। এ থেকে জাফর ইকবাল-পছন্দ সংষ্কৃতি কিছুটা বোঝা যায়। জাফর ইকবাল তার মেয়ের জীবন-যাপনকে অপছন্দ করেন বলে শুনিনি।
আর জাফর ইকবালের অমতে তার মেয়ে যদি এ রকম ভিন দেশী সংষ্কৃতি মেনে চলে থাকে, তাহলে জাফর ইকবালের উচিত তা খোলাখুশি ভাবে বলা। সেক্ষেত্রে তিনি বলতে পারেন, যদিও আমি বাঙালি সংষ্কৃতিকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল সংষ্কৃতি মনে করি, রবীন্দ্রনাথকে পুজা করা যায় বলে মনে করি কিন্তু আমার নিজের মেয়ের কাছে আমি বাঙালি সংষ্কৃতি বা রবীন্দ্রনাথকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারিনি। সে তার নিজের সংষ্কৃতি নিজে বেছে নিয়েছে। কিন্তু তোমরা নিজের পছন্দ নিজে ঠিক করে নেবে না। আমি যা বলি তা তোমরা করবে। তোমরা দাড়ি, টুপি আর বোরকার খোলস থেকে বেড়িয়ে এসে উন্নত হও (অবশ্য ওনার জন্য দাড়ির বিরুদ্ধে বলা মুষ্কিল কারণ স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ দাড়ি রেখেছিলেন)। অথবা এ রকম করে নিজের অবস্থানকে পরিষ্কার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ইয়েসিমের যত ব্যক্তিগত ছবিই ইন্টারনেটে বা ব্লগে দেওয়া হোক না কেন তা জাফর ইকবালের গায়ে লাগবে না।
এখন পর্যন্ত জাফর ইকবালের লেখা ও তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ব্লগে যা হয়েছে তার দায় প্রথমত জাফর ইকবালকেই নিতে হবে। কারণ, তিনিই প্রথমে মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাসকে আঘাত করেছেন; অন্যায়ভাবে সমালোচনা করেছেন। এটি যদি তিনি না থামান, তাহলে পরবর্তীতেও আমাদেরকে এ রকম আরোও অনেক কিছু দেখার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
জাফর ইকবাল ও একটি অন্ধকার প্রদেশ-ফেসবুক
প্রথমত, যেই নারীদের মুক্তি নিয়ে জাফর স্যারের এতো আন্দোলন, যেই নারীদের মুক্তির দোহাই দিয়ে তিনি বিগত সরকারের আমলে ফতোয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন, এ সরকারের ই আমলে ঘটে যাওয়া পরিমলের ছাত্রী ধর্ষণ আর পারসোনার গোপন ভিডিও ঘটনার সময় কোথায় ছিলেন, কি ছিল তার ভুমিকা, এটা নিয়ে প্রশ্ন কিন্তু দাঁড়ায়। ভিকারুন্নেসার প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা যখন পরিমলের শাস্তির দাবিতে প্রথম আলোর প্রতিবেদন আর জাফর ইকবাল স্যারের একটা কলামের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন তখন এদের কেউ ই সাড়া দেন নি, প্রশ্ন দাঁড়ায় কেন? অবশেষে অসহায় হয়ে সেই শিক্ষার্থীরা প্রথম আলোতে একটি মন্তব্য প্রকাশের সুযোগ পায়,যেখানে তারা এই ব্যাপার টি তুলে ধরে,জাফর স্যার আর প্রথম আলোর নিষ্ক্রিয়তার কথা তারা সেখানে মুখ ফুটে বলে,এই আশায় এবার যদি উনারা কিছু করেন ! হয়তো উনার একটি কলামে সাড়া দেশ জুড়ে পরিমলের মত পাপিষ্ঠদের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন শুরু হতো,এই প্রতিক্ষায়। তারপরও সাড়া পাওয়া যায়নি তরুন প্রজন্মের আইকন “জাফর স্যার” এর। প্রশ্ন হল “কেন?” ।
দ্বিতীয়ত, ২০০২ সালের দিকে যখন তৎকালীন সরকার দেশের তেল-গ্যাস-কয়লা উত্তোলন নীতি প্রনয়ণ করেছিল, তখন তার বিরুদ্ধে জাফর স্যারের ভূমিকা ছিল মুখ্য, অথচ কিছুদিন আগে যখন আমাদের দেশের তেল-গ্যাস নিয়ে কনকো-ফিলিপস এর সাথে চুক্তি হল তখন সারা দেশের শিক্ষিত মহল,বুদ্ধিজীবি মহল তা নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তুলল, দেশ-বিরোধী চুক্তি রুখে দাড়াতে আনু মুহাম্মদ,আবুল মকসুদ সহ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের যখন জেলে যেতে হল তখন জাফর স্যার একটা টু শব্দ ও করলেন না, যেন দেশের কিচ্ছুই হচ্ছে না, এমন কি কারণ যে তিনি এবার আন্দোলন তো দূরে থাক, একটা কিছু বললেন না? প্রশ্ন টা আবার দাঁড়ায়, “কেন?”
তৃতীয়ত, গত বছরে লালন উৎসবে যখন লাইন ধরে বাউলদের চুল,দাড়িঁ কেটে দিল স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা, লালন সন্ন্যাসীদের কান্নায় যখন ভারী হয়েছিল ২ দিন পরে শহীদ মিনারের প্রাঙ্গন, তখন আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির ধারক ও বাহক জাফর সাহেব কোথায় ছিলেন? শহীদ মিনারে যাওয়া সেতো বহুত দূর, একটা সমবেদনা পর্যন্ত ব্যক্ত করলেন না, নাকি তিনি ভেবেছিলেন অধুনা বাঙালি সংস্কৃতি থেকে লালন ভক্তদের বাদ দিয়ে দিয়েছে বাংলা একাডেমী !! প্রশ্ন আবারো দাঁড়ালো “কেন?”
চথুর্তত, একমুখী শিক্ষার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তিনি আমাদের কে বাঁচিয়েছিলেন বলে আমরা মনে করি, তখন তার যুক্তি ছিল, এর ফলে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্কতা কমে যাবে। আমরা টা মানি, তার-ই ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২ বছর থেকে চালু হয়েছে ১৯৭৪ সালের ডঃ কুদরত-ই খুদা শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের আদলে সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থা, কিন্তু আসলেই কি আমাদের বিজ্ঞান মনস্কতা কতোটুকু বেড়েছে কে জানে? কেননা, বিজ্ঞানের সেই আদিকালের তথ্যে ভরা বইগুলা এখনো রয়ে গেছে, প্রশ্নগুলো এখনো অনেকটা ই আগের মতন, সাজেশন নির্ভরতা এখনো রয়ে গেছে, তাহলে কি এমন হয়েছে যাতে আমরা বিজ্ঞানের প্রতি খুব আগ্রহী হব? প্রশ্ন তো থাকতেই পারে... যদি কিছু হয় তাহলে অবশ্যই সেটা ভাল, তবে এখনো যেহেতু তেমন কিছুই হয়নি, আর জাফর স্যার এটা নিয়েও চুপটি মেরেছেন, তখন আমাদের প্রশ্নের অঙ্গুলি তার দিকেও ঘোরে।
পঞ্চমত, আমি জানিনা, মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে ওনার ক্ষোভের পরিমাণ এতো বেশি কেন। এবারের SUST এ যাতে মাদ্রাসার ছাত্ররা ভর্তি না হতে পারে তার প্রাণান্তকর চেষ্টা উনি করেছিলেন, ঘোষণা এসেছিল যে ৭টি ডিপার্টমেন্টে তারা ভর্তি হতে পারবেনা, পরে যদিও সিলেটবাসীর তোপের মুখে সেই ঘোষণা টিকতে পারেনি, এবং আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে ভর্তি পরীক্ষায় ১ম ও ২য় ২টি স্থান-ই মাদ্রাসা ছাত্রদের কৃতিত্ব, তাই ছোট্ট একটা প্রশ্ন, মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে এতো বিষ,আক্ষেপ কেন ওনার? ওরা কি এদেশের বাইরের কেউ?
ষষ্ঠত, দেশে এখন বিদ্যুৎ নিয়ে মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে মানুষের চিন্তার ও শেষ নেই, শেয়ার বাজারের কারচুপি আর ধস নিয়ে মানুষের কান্নার শেষ নেই,সামাজিক নানা সমস্যা যখন চরম আকার ধারণ করেছে তখন জাফর স্যার চুপ, অথচ বিগত গণত্রান্তিক সরকারের আমলে যে কোন রাষ্ট্রীয়,সামাজিক সমস্যা নিয়ে তার ভাষণের কোন শেষ ছিলনা, প্রতিদিন টিভি খুললেই যেন তাকেই দেখতাম,জ্বালাময়ী বিবৃতি দিচ্ছেন,অথচ এতো বড় কারচুপি হয়ে গেল শেয়ার বাজারে, তিনি চুপ। যদিও তারেক মাসুদের মৃত্যুর পর তাকে শুধু একদিন টিভি তে দেখেছিলাম, টকশো তে, বলছিলেন তারেক মাসুদ তার অতি আপনজন, কিন্তু পরক্ষনেই সন্দেহ জেগেছিল, এতই যখন আপন তখন বাংলাদেশের সব শিক্ষিত মানুষ যোগাযোগমন্ত্রীর পদত্যাগের জন্য আন্দোলন করছেন শহীদ মিনারে,রাস্তায় মিছিল-সভা করছেন তখন উনি কি কিসের নেশায় ঘরে বসেছিলেন? কিংবা বিদ্যুৎ সমস্যার প্রতিকার নিয়ে কেন ওনার কোন প্রতিবাদ নেই? বিশ্ব ব্যাংক যখন পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগে টাকা বরাদ্দ করা বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে ওনার সোচ্চারী মনোভাব কোথায় গেল? ট্রানজিট নিয়ে যখন মানুষের দুশ্চিন্তার শেষ নেই, ট্রানজিট দেয়ার পরও আমরা যখন কোন ট্রানজিট ফি পাইনা তখন কি দেশের স্বার্থের ব্যাঘাত ঘটেনা? সীমান্তে ফেলানি-রা লাশ হয়ে ঝুলছে আর সরকার যখন নীরব, তখন ওনার মাঝে দেশপ্রেমের ঝর্না বহে না?? সারা দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক হত্যা নিয়মিত হচ্ছে, অনেক আবুবকর আর আবিদ রা লাশ হয়ে গেছে, তারপরও কি ওনার মাঝে বিবেকের উদয় হয়না যে দেশ শিক্ষা ক্ষেত্রে রসাতলে গেল?
সর্বশেষত, এরকম অনেক ঘটনার কথা আছে যেগুলো নিয়ে আমরা প্রশ্ন করেই যেতে পারি, তবুও ২টি ব্যাপার নিয়ে না লিখে পারছিনা, যদিও শুরুতেই বলেছি উনার মেয়ের ছবি টা আমার আলোচনার মুখ্য বিষয় নয়,তবে প্রশ্ন তো জাগতেই পারেহ। মেনে নিলাম, ওনারা আমেরিকায় বড় হয়েছেন, আমেরিকান কালচারে বাস করেছেন, ঠিক আছে, কিন্তু তবুও, সংস্কৃতি চর্চাটা তো ঘর থেকেই হওয়া উচিত, এটা আবার মানতে বলবেন না যে আমেরিকায় যেসব বাংলাদেশী আছেন তারা সবাই ওনার মেয়ের মত, অনেক অনেক আমেরিকান বংশোদ্ভূত বাংলাদেশী আছেন যারা সেখানে বাঙালি জাতিসত্তা ধরে রেখেছেন,তা মেনে চলছেন। অস্বীকার করতে পারেন? যদিও এই ব্যাপার টা নিয়ে আমার তেমন মাথা ব্যাথা নেই। আর সর্বশেষ ব্যাপার, জাফর সাহেব ধর্ম কর্ম পছন্দ করেন না,এটা ওপেন সিক্রেট, কিন্তু তাই বলে কোটি কোটি মানুষের অনুভূতি কে হাশি-তামাশা আর গল্পের ভিলেন বানানো নিশ্চয়ই কোন মহৎ কাজ নয়।
প্রশ্ন করা শেষ, কিন্তু উত্তর পর্বটা বাকী, শুরুতেই বলে নিই যে, আমি দলীয় প্রপাগোন্ডা চালাতে এখানে লিখতে বসিনি, তবে জাফর সাহেবের কাজ কারবার দেখে আমার কাছে কিছু ব্যাপার মনে হয়েছে, সেগুলাই বলছি, উপরের আলোচনা পড়লেই আপনি বুঝতে পারবেন সেই ব্যাপারটা, দেখুন, জাফর স্যার যখনি কোন গঠনমূলক(!!) ভূমিকা রেখেছেন সময়টা ছিল বিগত সরকারের আমল, আর একই ধরনের ঘটনা গুলো যখন এই সরকারের আমলে ঘটেছিল তখন তিনি নিরব দর্শক, তার মানে কি? তিনি ও কি তাহলে দলীয় বুদ্ধিজীবি ?? দলের শাসনামলে তিনি চুপ, আর বিরোধী পক্ষ ক্ষমতায় গেলেই তিনি আবার বারুদ ??? যদি তা না হয়েই থাকে তাহলে সেটা কি আপনারা ই বলুন।
অনেকে স্যারকে প্রভু মানেন, উনার কথাকে চির সত্য মনে করেন।উনার কথায় কোন ভুল থাকতে পারে তা বিশ্বাস করতে চান না।
আমিও বিশ্বাস করি তার লেখায় কোন ভুল নেই, ভুল আছে তার চিন্তা চেতনায়, মানসিকতায়, বিশ্বাসে। বিশ্বাস যেটা করবেন সেটাই তো উনার লেখায় ফুটে উঠবে তাই নয় কি?? মুখে বাঙ্গালিয়ানার বুলি আউরিয়ে, বুকে লালন করেন পশ্চিমা সংস্কৃতি। এখানেই উনার সাথে আমার যত মাতামাতি। অবশ্য আমার মতো একজন আনস্মার্ট তরুন মাতামাতি করলেও উনার কিছু যায় আসে না, কেননা আমাকে নিয়ে তো আর উনার কোন সপ্ন নেই!!!
আজ কেন এত কথা আসছে জানেন?? এত কথা আসছে প্রথম আলোতে প্রকাশিত স্যার এর একটি লেখার জন্য।
যেখানে তিনি তরুন প্রজন্মকে সংজ্ঞায়িত করেছেন টি-শার্ট পরা সুদর্শন কিছু তরুণ ও উজ্জ্বল রঙের ফতুয়া পরা হাসিখুশি কিছু তরুণীর চেহারার সাথে। তার এই ধারনা এসেছে মোবাইল কোম্পানি গুলোর বিজ্ঞাপন দেখে। আমি উনাকে দোষ দিবো না।টিভি মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেখে সমাজের বৃহত্তর অংশ বিচ্যুত যে কারো এমন ধারনা হওয়াই স্বাভাবিক। অবশ্য নিজেকে তিনি তরুন প্রজন্মের কাছাকাছি একজন ভাবেন। তারপরও আমি তরুন প্রজন্মের একজন হয়ে বলতে পারি, তার সংজ্ঞা কোনভাবেই ঠিক না। উনার লেখায় উনি বলতে চেয়েছেন, উনার সংজ্ঞায়িত ‘তরুন প্রজন্ম’কে নিয়ে তিনি সপ্ন দেখেন, কিন্তু আমি বলতে চাই টি শার্ট পড়লেই সুদর্শন হওয়া যায় না কিংবা উজ্জ্বল রঙের ফতুয়া পড়ে গগন বিদারী হাসি দিলেই বলা যাবে না সে দেশের সম্পদ, তাকে নিয়ে সপ্ন দেখো।মূলত তিনি এর মাধ্যমে তরুনীদেরকে এই বানী পৌঁছে দিলেন যে, তোমরা যদি ফতুয়া পরে রাস্তায় না বের হও তোমাদেরকে সত্যিকার অর্থে সম্ভাবনাময় তরুণী বলা যাবে না!আর যদি তাই হতো, তা হলে প্রতি বছর নোবেল পুরস্কারটা বোধহয় সখ,তিন্নি,মিলা, তিশা কিংবা নাফিজারা নিয়ে আসতো।তাই বলা যায় তার কাছে তরুন প্রজন্মের চেহারাটা এমন-
তিনি লিখেছেন,” বেশ কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ছেলেমেয়েরা ভাষা আন্দোলন নিয়ে একটা আলোকচিত্র প্রদর্শনী করেছিল। আমি আর আমার স্ত্রী সেটা দেখতে গিয়েছিলাম। বড় বড় ছবি দেখতে দেখতে আমার স্ত্রী আমাকে বলল, ‘একটা জিনিস লক্ষ করেছ?’ আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী জিনিস? আমার স্ত্রী বলল, ‘ভাষা আন্দোলনে কত মেয়ে! কিন্তু একটি মেয়েও বোরকা পরে নেই, একটি মেয়েও হিজাব পরে নেই।’ আমি তাকিয়ে দেখি, তার কথা সত্যি। ষাট বছর আগে এ দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের বোরকা পরতে হতো না, এখন মেয়েদের বোরকা পরতে হয়।”
৬০ বছর আগে কোন পুরুষ ছাত্রী হোস্টেলে ঢুকতে পারতো না, সে সম্পর্কে যেই হোক না কেন।(যেটা আপনি করেছেন)
৬০ বছর আগে কোন মেয়ে মদ,সিগারেট, ইয়াবাতে আসক্ত ছিলো না।
৬০ বছর আগে শিক্ষকরা পরিমল ছিলো না।
৬০ বছর আগে কেউ পরিমলদের সমর্থন দিত না।
৬০ বছর আগে দেশে যৌন হয়রানি/ ইভ টিজিং হতো না।
৬০ বছরে দেশের অনেক পরিবর্তন হয়েছে, যা আগে ছিল না। ৬০ বছর আগে কোন নারী একা সমাজে চলতো না।সঙ্গী হিসাবে থাকতো বাবা, ভাই কিংবা স্বামী। এখন একজন নারী একাই সমাজে চলতে পারে।
0 comments:
Post a Comment