আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবী বলে পরিচিতি লেখকদের এক অংশ, তারা সুশীল সমাজ নামেও পরিচিত। সভা-সেমিনার, দাতাগোষ্ঠীর দয়াদাক্ষিণ্য, ভিক্ষার ওপর নির্ভর করে কলম চালান। তরুণ সমাজকে বিভ্রান্ত করেন। তাদের লেখার ভাষা ঝরঝরে। সবকিছু দেখেন, বোঝেন আবার এই লেখক সম্প্রদায়ই কিছুই না বোঝার ভাণ করে তাদের সস্তা মতামত প্রদান করেন।
শিশু-কিশোরদের জনপ্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল সাহেব তাঁদেরই অনুগত দৈনিক ‘প্রথম আলো’তে গত ৫ মার্চে লেখেন: ‘আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে বিদেশের মাটিতে কী নিষ্ঠুরভাবে তাচ্ছিল্য এবং অসম্মানের সঙ্গে উপস্থাপন করা হয়... মুহাম্মদ ইউনূস একা সেটিকে কত বড় একটি মর্যাদার আসনে নিয়ে গেছেন। মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে দরিদ্র নারীদের সাহায্য করেন। বাংলাদেশের আনাচেকানাচে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নামে মামলা হতে লাগল। প্রফেসর ইউনূস সারাদেশে ছোটাছুটি করে সেই মামলার জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন। যে মানুষটি সারা পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত একজন তাঁকে তাঁর দেশের সরকার এ রকমভাবে অসম্মান করতে পারে।’
অধ্যাপক জাফর ইকবাল তার লেখায় দেশের সরকার আইনকানুন। বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা নিয়েও আমাদের অনেক জ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের সংস্কৃতিতে আমরা সম্মানী মানুষের, বিশেষ করে বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মান রক্ষা করে কথা বলি, কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইউনূসকে রক্তচোষা সুদখোর বলায় কী বেয়াদবি হয়েছে?’
আসুন আমরা অধ্যাপক জাফর ইকবালের লেখার ভাসাভাসা দিকগুলো নিয়ে কথা বলি। প্রথমত, জাফর ইকবাল সাহেব ছাত্র পড়ানোর মতো করে ওই লেখাটি লিখেছেন। আমরা যেহেতু তার ছাত্র নই, তাই আমরা বাধ্য নই তার সব মতামতের সাথে একমত হতে।
ক্ষুদ্রঋণের জনক বলে যে ইউনূসের নাম প্রচার করা হয় তা আমাদের সমাজের বহুকাল আগে ‘সমবায় সমিতি’ নামে ছিল। তবে তার সুদের অঙ্ক খুবই সামান্য ছিল। ড. মুহাম্মদ ইউনুসের ক্ষুদ্রঋণে একজন গরিব মানুষকে ৪৫% সুদ দিতে হয়। একজন গরিব মানুষ এই ঋণ নেয়ার সময় সপ্তাহের প্রথম কিস্তি কেটে রেখে বিভিন্ন ফর্ম বা কাগজপত্রের মাধ্যমে আরও কিছু টাকা কেটে রাখেন। গরু-ছাগল কেনা, ছোট দোকানদারি শুরু করার আগে থেকেই এই ঋণের কিস্তি প্রতি সপ্তাহে প্রদান করতে হয়।
আমাদের ধনী ব্যবসায়ীরা সর্বোচ্চ ১৫% সুদে ঋণ নিয়ে থাকে। এদের কেউ কেউ জীবনেও সেই টাকা ব্যাংককে পরিশোধ করে না। এদের গ্রেপ্তার হওয়ার খবরও সংবাদপত্রে ছাপা হয় না। কিন্তু ক্ষুদ্রঋণে জর্জরিত হয়ে অসংখ্য নারী-পুরুষ যেমন আত্মাহুতি দিয়েছে, তেমনি গত ৩৫ বছরেও বাংলাদেশ তার দারিদ্র্য সীমার ওপরে নামতে পারেনি। এখনও বাংলাদেশের ৪০ ভাগ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে। দাতাগোষ্ঠীর অর্থনীতিবিদসহ দালাল গবেষকদের কাছেও এই পরিসংখ্যান আছে। সারা পৃথিবীতে ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসায়ীরাও কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি ক্ষুদ্রঋণ দারিদ্র্য কমাতে পেরেছে।
বলিভিয়া, ভারত, বাংলাদেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষুদ্রঋণে জর্জরিত। সম্প্রতি ভারত সরকার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার কমানোর। কারণ ক্ষুদ্রঋণের কারণে ভারতে নারীদের আত্মহত্যার হার বেড়ে গেছে। পশ্চিমা গণমাধ্যমের প্রপাগান্ডার ফলে বিশ্বব্যাপী ইউনূসকে যে মাতম শুরু হয়েছিল, সাম্প্রতিক সময় তাতে চিড় ধরেছে। ক্ষুদ্রঋণের ভাওতাবাজি, উন্মোচিত হচ্ছে।
ইউরোপে একসময় যারা ক্ষুদ্রঋণের জয়গান গাইতো আজ তারাই শুরু করেছে ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ে উল্টো গান। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো খুঁজছিল একজন ইউনূসকে। এমন একটি লোকও কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না যে, গরিব মানুষকে ঋণ দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা ব্যবসা করতে পারে। গ্রামীণ ব্যাংক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলে একই ব্যাংকের গ্রাহকদের কাছে বিশ্বের নামি-দামি ব্র্যান্ডের পণ্য বিক্রয় করেও লাভ করছে। একজন নামি-দামি ব্যক্তি নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত ও একমাত্র বাংলাদেশি যিনি দই বিক্রেতাও। তাঁর কোম্পানির ‘শক্তি দই’, শিশুদের জন্য পুষ্টিকর তো নয়ই বরং অস্বাস্থ্যকর। ফ্রান্সের সেই শক্তিদই বাংলাদেশে ফেরি করতে নিয়ে এসেছেন এই নোবেল লরিয়েট দইওয়ালা। আর দশটা প্রতিষ্ঠানের মতো ‘শক্তিদই’ তে ভেজাল থাকায় সরকারি আইন অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
‘শিশু দরদী’ জনাব জাফর ইকবাল এই মামলাকে আক্রোশ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে জনাব ইউনূস সিরাজগঞ্জে ও টাঙ্গাইল টেক্সটাইল মিলের নামে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে ওই বেসরকারি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। টাকা দেবার ক্ষমতা থাকার পরও তিনি এক কোটি টাকা পরিশোধ করেননি। আর নোবেলজয়ী গ্রামীণ ব্যাংক ৫ হাজার, ১০ হাজার টাকার জন্য গ্রামের মানুষের ঘরের টিনের চাল খুলে নিয়ে যায়। গরিব মানুষদের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখে। জনাব জাফর ইকবাল সাহেবের এই সংবাদ কি চোখে পড়ে না?
যে জোবরা গ্রামে সুফিয়া বেগমকে ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার মধ্যে দিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেই সুফিয়া বেগম ভিক্ষা করতে করতে মৃত্যুবরণ করেছেন। যশোরের হিলারি পল্লী বলে যে গ্রামকে দেখানো হয়েছিল হিলারি ক্লিনটনের আগমন উপলক্ষ্যে সেই গ্রামবাসীকে নগদ টাকা ঋণ দিয়ে তাদের চৌদ্দ গোষ্ঠীকে ঋণের জালে জর্জরিত করেছেন ড. ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক। হিলারি চলে যাওয়ার পরের মাস থেকে হিলারি পল্লীতে নেমে আসে অন্ধকার। অবশ্য জাফর ইকবাল সাহেব যে পত্রিকায় লেখেন এবং পড়েন ওইসব পত্রিকায় এ জাতীয় দুঃসংবাদ ছাড়া হয় না। কারণ যা কিছু ভালো তার সঙ্গে তারা রয়েছে। একজন নোবেলজয়ী দই ব্যবসা করলে আর তাতে ভেজাল থাকলে যদি তার বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করা না যায়, একজন ঋণের টাকা ফেরত দিতে সক্ষম ব্যক্তি যদি কোনো ব্যাংক থেকে কোটি কোটি নিয়ে ফেরত না দেন-- তার জন্য দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা না নেওয়া যায়, তাহলে বাংলাদেশের সংবিধানে পরিবর্তন আনতে হবে।
আইন-কানুন পরিবর্তন করে একজন নোবেলজয়ীল জন্য আলাদা আইনের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে যেকোনো দই ব্যবসায়ী তার খাদ্যে ভেজাল মেশানের পরও শাস্তি পাবে না। বাংলাদেশের জনগণের কোটি কোটি টাকা ব্যাংক থেকে নেওয়ার পরও আর কেউ ফেরত দিতে চাইবে না
বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম লাভ করেছে। সেই যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের বিরোধী ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো যুদ্ধাপরাধী হেনরি কিসিঞ্জারও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। হিলারি ক্লিনটন, বিল ক্লিনটন, ওবামার ড্রইংরুমে যাওয়া ইউনূস, ইউরোপের রাজা রানীদের সাথে সখ্য গড়া ইউনূসের সম্মান যাওয়ার সাথে বাংলাদেশকে পৃথিবীর সমানে অসম্মান করা হয়! আমরা জাফর ইকবালের সেই সহজ কথাটির সাথে একমত নই। আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। হিলারি ক্লিনটন অথবা ওবামার কথায় বাংলাদেশ চলবে না। বাংলাদেশের সরকার প্রধানরা পশ্চিমা কূটনীতিকদের কথায় উঠবস করবে না।
রবীন আহসান: প্রকাশক ও প্রাবন্ধিক।
লেখাটিতে প্রকাশিত সব অভিমত লেখকের ব্যক্তিগত।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১১
শিশু-কিশোরদের জনপ্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল সাহেব তাঁদেরই অনুগত দৈনিক ‘প্রথম আলো’তে গত ৫ মার্চে লেখেন: ‘আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে বিদেশের মাটিতে কী নিষ্ঠুরভাবে তাচ্ছিল্য এবং অসম্মানের সঙ্গে উপস্থাপন করা হয়... মুহাম্মদ ইউনূস একা সেটিকে কত বড় একটি মর্যাদার আসনে নিয়ে গেছেন। মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে দরিদ্র নারীদের সাহায্য করেন। বাংলাদেশের আনাচেকানাচে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নামে মামলা হতে লাগল। প্রফেসর ইউনূস সারাদেশে ছোটাছুটি করে সেই মামলার জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন। যে মানুষটি সারা পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত একজন তাঁকে তাঁর দেশের সরকার এ রকমভাবে অসম্মান করতে পারে।’
অধ্যাপক জাফর ইকবাল তার লেখায় দেশের সরকার আইনকানুন। বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা নিয়েও আমাদের অনেক জ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের সংস্কৃতিতে আমরা সম্মানী মানুষের, বিশেষ করে বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মান রক্ষা করে কথা বলি, কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইউনূসকে রক্তচোষা সুদখোর বলায় কী বেয়াদবি হয়েছে?’
আসুন আমরা অধ্যাপক জাফর ইকবালের লেখার ভাসাভাসা দিকগুলো নিয়ে কথা বলি। প্রথমত, জাফর ইকবাল সাহেব ছাত্র পড়ানোর মতো করে ওই লেখাটি লিখেছেন। আমরা যেহেতু তার ছাত্র নই, তাই আমরা বাধ্য নই তার সব মতামতের সাথে একমত হতে।
ক্ষুদ্রঋণের জনক বলে যে ইউনূসের নাম প্রচার করা হয় তা আমাদের সমাজের বহুকাল আগে ‘সমবায় সমিতি’ নামে ছিল। তবে তার সুদের অঙ্ক খুবই সামান্য ছিল। ড. মুহাম্মদ ইউনুসের ক্ষুদ্রঋণে একজন গরিব মানুষকে ৪৫% সুদ দিতে হয়। একজন গরিব মানুষ এই ঋণ নেয়ার সময় সপ্তাহের প্রথম কিস্তি কেটে রেখে বিভিন্ন ফর্ম বা কাগজপত্রের মাধ্যমে আরও কিছু টাকা কেটে রাখেন। গরু-ছাগল কেনা, ছোট দোকানদারি শুরু করার আগে থেকেই এই ঋণের কিস্তি প্রতি সপ্তাহে প্রদান করতে হয়।
আমাদের ধনী ব্যবসায়ীরা সর্বোচ্চ ১৫% সুদে ঋণ নিয়ে থাকে। এদের কেউ কেউ জীবনেও সেই টাকা ব্যাংককে পরিশোধ করে না। এদের গ্রেপ্তার হওয়ার খবরও সংবাদপত্রে ছাপা হয় না। কিন্তু ক্ষুদ্রঋণে জর্জরিত হয়ে অসংখ্য নারী-পুরুষ যেমন আত্মাহুতি দিয়েছে, তেমনি গত ৩৫ বছরেও বাংলাদেশ তার দারিদ্র্য সীমার ওপরে নামতে পারেনি। এখনও বাংলাদেশের ৪০ ভাগ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে। দাতাগোষ্ঠীর অর্থনীতিবিদসহ দালাল গবেষকদের কাছেও এই পরিসংখ্যান আছে। সারা পৃথিবীতে ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসায়ীরাও কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি ক্ষুদ্রঋণ দারিদ্র্য কমাতে পেরেছে।
বলিভিয়া, ভারত, বাংলাদেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষুদ্রঋণে জর্জরিত। সম্প্রতি ভারত সরকার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার কমানোর। কারণ ক্ষুদ্রঋণের কারণে ভারতে নারীদের আত্মহত্যার হার বেড়ে গেছে। পশ্চিমা গণমাধ্যমের প্রপাগান্ডার ফলে বিশ্বব্যাপী ইউনূসকে যে মাতম শুরু হয়েছিল, সাম্প্রতিক সময় তাতে চিড় ধরেছে। ক্ষুদ্রঋণের ভাওতাবাজি, উন্মোচিত হচ্ছে।
ইউরোপে একসময় যারা ক্ষুদ্রঋণের জয়গান গাইতো আজ তারাই শুরু করেছে ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ে উল্টো গান। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো খুঁজছিল একজন ইউনূসকে। এমন একটি লোকও কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না যে, গরিব মানুষকে ঋণ দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা ব্যবসা করতে পারে। গ্রামীণ ব্যাংক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলে একই ব্যাংকের গ্রাহকদের কাছে বিশ্বের নামি-দামি ব্র্যান্ডের পণ্য বিক্রয় করেও লাভ করছে। একজন নামি-দামি ব্যক্তি নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত ও একমাত্র বাংলাদেশি যিনি দই বিক্রেতাও। তাঁর কোম্পানির ‘শক্তি দই’, শিশুদের জন্য পুষ্টিকর তো নয়ই বরং অস্বাস্থ্যকর। ফ্রান্সের সেই শক্তিদই বাংলাদেশে ফেরি করতে নিয়ে এসেছেন এই নোবেল লরিয়েট দইওয়ালা। আর দশটা প্রতিষ্ঠানের মতো ‘শক্তিদই’ তে ভেজাল থাকায় সরকারি আইন অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
‘শিশু দরদী’ জনাব জাফর ইকবাল এই মামলাকে আক্রোশ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে জনাব ইউনূস সিরাজগঞ্জে ও টাঙ্গাইল টেক্সটাইল মিলের নামে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে ওই বেসরকারি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। টাকা দেবার ক্ষমতা থাকার পরও তিনি এক কোটি টাকা পরিশোধ করেননি। আর নোবেলজয়ী গ্রামীণ ব্যাংক ৫ হাজার, ১০ হাজার টাকার জন্য গ্রামের মানুষের ঘরের টিনের চাল খুলে নিয়ে যায়। গরিব মানুষদের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখে। জনাব জাফর ইকবাল সাহেবের এই সংবাদ কি চোখে পড়ে না?
যে জোবরা গ্রামে সুফিয়া বেগমকে ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার মধ্যে দিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেই সুফিয়া বেগম ভিক্ষা করতে করতে মৃত্যুবরণ করেছেন। যশোরের হিলারি পল্লী বলে যে গ্রামকে দেখানো হয়েছিল হিলারি ক্লিনটনের আগমন উপলক্ষ্যে সেই গ্রামবাসীকে নগদ টাকা ঋণ দিয়ে তাদের চৌদ্দ গোষ্ঠীকে ঋণের জালে জর্জরিত করেছেন ড. ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক। হিলারি চলে যাওয়ার পরের মাস থেকে হিলারি পল্লীতে নেমে আসে অন্ধকার। অবশ্য জাফর ইকবাল সাহেব যে পত্রিকায় লেখেন এবং পড়েন ওইসব পত্রিকায় এ জাতীয় দুঃসংবাদ ছাড়া হয় না। কারণ যা কিছু ভালো তার সঙ্গে তারা রয়েছে। একজন নোবেলজয়ী দই ব্যবসা করলে আর তাতে ভেজাল থাকলে যদি তার বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করা না যায়, একজন ঋণের টাকা ফেরত দিতে সক্ষম ব্যক্তি যদি কোনো ব্যাংক থেকে কোটি কোটি নিয়ে ফেরত না দেন-- তার জন্য দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা না নেওয়া যায়, তাহলে বাংলাদেশের সংবিধানে পরিবর্তন আনতে হবে।
আইন-কানুন পরিবর্তন করে একজন নোবেলজয়ীল জন্য আলাদা আইনের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে যেকোনো দই ব্যবসায়ী তার খাদ্যে ভেজাল মেশানের পরও শাস্তি পাবে না। বাংলাদেশের জনগণের কোটি কোটি টাকা ব্যাংক থেকে নেওয়ার পরও আর কেউ ফেরত দিতে চাইবে না
বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম লাভ করেছে। সেই যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের বিরোধী ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো যুদ্ধাপরাধী হেনরি কিসিঞ্জারও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। হিলারি ক্লিনটন, বিল ক্লিনটন, ওবামার ড্রইংরুমে যাওয়া ইউনূস, ইউরোপের রাজা রানীদের সাথে সখ্য গড়া ইউনূসের সম্মান যাওয়ার সাথে বাংলাদেশকে পৃথিবীর সমানে অসম্মান করা হয়! আমরা জাফর ইকবালের সেই সহজ কথাটির সাথে একমত নই। আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। হিলারি ক্লিনটন অথবা ওবামার কথায় বাংলাদেশ চলবে না। বাংলাদেশের সরকার প্রধানরা পশ্চিমা কূটনীতিকদের কথায় উঠবস করবে না।
রবীন আহসান: প্রকাশক ও প্রাবন্ধিক।
লেখাটিতে প্রকাশিত সব অভিমত লেখকের ব্যক্তিগত।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১১
0 comments:
Post a Comment